যারা ভ্রমণপিপাসু মানুষ রয়েছেন যারা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন সর্বপ্রথম কোনো দেশে ভ্রমণ করার পর যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে স্মার্টফোনে সিম ব্যাবহার, ভয়েস কল করতে না পারা, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্যুরিস্টদের জন্য আলাদা অফার সম্বলিত সিম কার্ড এর ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে এই সুযোগ-সুবিধা টি নেই।
বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ট্যুরিস্ট সিমকার্ড।
বাংলাদেশ এ ধরনের অফার সম্বলিত Tourist SIM না থাকায় তারা সাধারণত বাংলাদেশের সাধারণ যে সিম গুলো রয়েছে সেই সিম গুলো ট্যুরিস্টদেরকে অফার করে থাকে। এবং এখনো পর্যন্ত যারা বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন তারা বাংলাদেশের যে সাধারণ সিম গুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু খুব দ্রুতই শেষ হতে যাচ্ছে সেই অধ্যায় কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ট্যুরিস্টদের জন্য বাংলাদেশ বিটিআরসি ট্যুরিস্ট সিম কার্ডের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। তারা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি একটি নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ বা পদক্ষেপ নিয়েছেন।
Tourist SIM কেন প্রয়োজন?
সাধারণত বেশিরভাগ বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে আসেন স্বল্প সময়ের জন্য। এতদিন বাংলাদেশে যারাই ভ্রমণ করতেন তারা সাধারণত পাসপোর্ট এর বিপরীতে বাংলাদেশের নাগরিকরা যেই সিম ব্যবহার করে থাকেন সেই সিম গুলো তারা ব্যবহার করতো। এতে করে কি হতো যখন সেই বিদেশি নাগরিক ভ্রমণ শেষে বাংলাদেশ ত্যাগ করতেন তখন সেই সিম গুলো আর ব্যবহার করা যেত না। এমন অবস্থায় ওই সিমগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতো এতে করে সিমকার্ডের পরিমাণ বেড়ে গেলেও সেখান থেকে কোন প্রকার রাজস্ব আসতো না সরকার এর।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে গত এক বছরে বিদেশি নাগরিকরা প্রায় ৩১ হাজার ৩৫৪টি সিম নিবন্ধন করেছেন এবং দেশ ত্যাগ করার পর সেই সবগুলো সিম অব্যবহৃত বা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শুধু শুধু সিমগুলো অপচয় হলেও সেখান থেকে বাংলাদেশ সিম কোম্পানিগুলো কোন প্রকার প্রফিট করতে পারেনি। তাছাড়া বিদেশি নাগরিকরা স্বল্প সময়ের জন্য একটি পার্মানেন্ট সিম কিনতে আগ্রহী থাকেনা। এতে করে কোম্পানিগুলোর অনেক প্রফিত লস হচ্ছে। কিন্তু যদি Tourist SIM ব্যবহার করা হতো সেক্ষেত্রে ট্যুরিস্টরা স্বল্প সময়ের জন্য একটি সিম কার্ড ব্যবহার করতে পারতেন এবং সেই সিম কার্ডটি পুনরায় রিসাইকেল করার অনুমতি দিতে পারতেন। এতে করে উক্ত সিম কার্ডটি পড়ে থাকবে না বা অব্যবহিত অবস্থায় পড়ে থাকবে না এবং অবৈধভাবে সিম রেজিস্ট্রেশন অনেকটা বন্ধ হয়ে যেত।
Tourist SIM কিভাবে ক্রয় করবেন।
বাংলাদেশ বিটিআরসি অনুমোদিত টুরিস্ট সিম রিলিজ হবার পর বাংলাদেশে ভ্রমণকারী যে কোন বিদেশী নাগরিক তার পাসপোর্ট এর মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে উক্ত Tourist SIM ক্রয় করতে পারবেন। সাধারণত ৭ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত নিবন্ধিত অবস্থায় থাকবে এবং এটি নিবন্ধিত থাকাকালীন পর্যন্ত ইন্টারনেট এবং ভয়েস কল সার্ভিস উপভোগ করতে পারবেন। তবে যদি কোন ব্যক্তি এর চেয়েও বেশি সময়ের জন্য উক্ত সিমটি ব্যবহার করতে চান তবে সেই ক্ষেত্রে সিমের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারবেন। সিম রেজিস্ট্রেশন এর জন্য সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্লাটফর্মে আলাদাভাবে নিবন্ধন করা হবে। এত করে কোন ব্যক্তি দুটির বেশি সিম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না এবং সিমটি মনিটরিং করা হবে যেন কোন অবৈধ কার্যকলাপ সিম দ্বারা না করতে পারে।
বলে রাখা ভালো একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি সিম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং সিমটি রেজিস্ট্রেশন থেকে ৭ দিন অথবা ৩০ দিন মেয়াদ শেষ হবার পর অটোমেটিক্যালি সিমটি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মেয়াদ থাকাকালিন সময় যদি আপনার মনে হয় আপনি সিমটি আরো দীর্ঘদিন ব্যবহার করবেন সেক্ষেত্রে মেয়াদ থাকাকালীন অবস্থায় আপনাকে সিমের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে হবে।
Tourist SIM এর সুবিধা।
ট্যুরিস্ট সিমের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। যেমন কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে ভ্রমণ করার সাথে সাথেই খুব সহজে তিনি তার পাসপোর্ট ব্যবহার করে এবং তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে একটি ট্যুরিস্ট সিম ক্রয় করতে পারবেন। এতে করে কোন টুরিস্ট বা বিদেশি নাগরিকরা খুব সহজেই বাংলাদেশের সিম খুভ সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। আগে যে সাধারণ সিমগুলো ব্যবহার করা হতো সেটি ছিলো বাংলাদেশের নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন করা সিম। ট্যুরিস্টরা এগুলোই ব্যবহার করত এতে করে উক্ত সিম কার্ডটি অবৈধভাবে বিভিন্ন খারাপ কাজে ব্যবহারের প্রবণতা বেশি হতো। টুরিস্ট সিম ব্যবহারের ফলে সেই প্রবণতার অনেকটা কমে আসবে।
ট্যুরিস্টরা নিজের পার্সোনাল একটি সিম ব্যবহার করতে পারবেন তাও সেটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। Tourist SIM বিদেশি নাগরিক চলে যাওয়ার আগে যে কোনো সময় চাইলেই সিমটি ডি-এক্টিভেট করে রাখতে পারবেন। এতে করে সিমটি অবৈধভাবে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। ট্যুরিস্টরা সহজেই অল্প দামে সিম ক্রয় করতে পারবেন এবং উক্ত সিম দিয়ে সকল ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। একটি সিম ক্রয় করে সেই সিম টি চাইলেই ট্যুরিস্ট দ্বিতীয়বার ভ্রমণে কাজে লাগাতে পারবেন।
Tourist SIM সম্পর্কে বিস্তারিত।
ট্যুরিস্ট সিম একটি নির্দিষ্ট ব্লকের হবে যে সিমটি শুধুমাত্র ট্যুরিস্টরা ব্যবহার করতে পারবেন। টুরিস্ট ব্যতীত অন্য কেউ এই সিম ক্রয় বা ব্যবহার করতে পারবেন। এই সিমের মেয়াদ সাধারণত ৭ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত নিবন্ধিত থাকবে এবং যদি কোন টুরিস্ট সিমের মেয়াদ বাড়াতে চান সেক্ষেত্রে সিমের মেয়াদ থাকাকালীন অবস্থায় প্রয়োজন হলে বাড়িয়ে নিতে পারবেন। সিম ক্রয় করতে অবশ্যই ট্যুরিস্ট এর পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে ক্রয় করতে হবে। একজন ট্যুরিস্ট সর্বোচ্চ দুটি সিম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। সিম দিয়ে ইন্টারনেট এবং ভয়েস কল ইত্যাদি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
আজকে এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আবারো ফিরে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে সেই পর্যন্ত sohojtech.com এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন
0 মন্তব্যসমূহ