বর্তমান প্রযুক্তি এতটাই এগিয়ে গেছে যে ঘরে ঘরে এখন স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টওয়াচ এবং বিভিন্ন ধরনের গেজেট লক্ষ করা যায়। আমরা যখন আমাদের ব্যক্তিগত কাজের জন্য একটি কম্পিউটার কিনতে চাই তখন আমরা চিন্তা করি যে আমরা ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্রয় করবো নাকি ল্যাপটপ ক্রয় করব। ডেস্কটপ কম্পিউটার আমার জন্য ভালো হবে নাকি একটি ল্যাপটপ আমার জন্য ভালো হবে। যখন আমাদের কাছে দুটি চয়েস থাকে তখন আমরা সাধারণত দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই যে কোনটি ক্রয় করব। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আশাকরি আপনারা এ ধরনের সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
ল্যাপটব থেকে ডেস্কটপ কেন ভালো এবং কেন সবাই ডেস্কটপ ক্রয় করে?
একটি নতুন কম্পিউটার কেনার সময় সাধারণত অধিকাংশ মানুষ ডেস্কটপ কম্পিউটার পছন্দ করে থাকেন। আবার অনেকে অফিসের বিভিন্ন কাজের জন্য অথবা পার্সোনাল কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ল্যাপটপকে বেশি পছন্দ করে থাকেন। যাই হোক আপনি যদি কম্পিউটার ক্রয় করতে চান তাহলে আপনি হয়তো ভাবছেন কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ এর মধ্য থেকে কোনটি বেছে নিবেন। সাধারণত একটি ডেস্কটপ কম মূল্যের মধ্যে অধিক পারফরম্যান্স সমৃদ্ধ একটি কম্পিউটার প্রদান করতে পারে। অন্যদিকে একই সেগমেন্টের মধ্যে একটি ল্যাপটপ ক্রয় করতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনাকে অধিক মূল্য দিয়ে সেটি ক্রয় করে করতে হবে। আপনি যদি শুধুমাত্র বহনযোগ্যতাকে সবকিছুর উপরে বিবেচনা করেন তাহলে আপনার জন্য ল্যাপটপ বেছে নেওয়াই উত্তম। সহজেই বহনযোগ্যতা ছাড়া সব দিক দিয়ে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কেনা সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ এটি আপনাকে ল্যাপটপের চেয়ে অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিবে। তাই চলুন জেনে নেই ল্যাপটপ থেকে ডেস্কটপ কেন ভালো এবং কেন সবাই ডেক্সটপ ক্রয় করতে চায়।
ডেস্কটপ এর দাম কম।
একটি ল্যাপটপ এর চেয়ে একটি ডেস্কটপ সেরা হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো এর দাম। একটি ল্যাপটপ এর চেয়ে একটি ডেস্কটপ এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটা কম। আপনি যে দামে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্রয় করতে পারবেন সেই একই দামে একই কনফিগারেশনের একটি ল্যাপটপ ক্রয় করতে পারবেন না। আপনি যদি একটি ল্যাপটপ এবং একটি ডেস্কটপ এর কনফিগারেশন তুলনা করে দাম টা কে বিবেচনা করেন সেক্ষেত্রে দেখবেন কনফিগারেশনের জন্য ল্যাপটপ এর তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে একটি ডেস্কটপ ক্রয় করতে পারছেন। তাই অনেকে দামের কারণে ল্যাপটপ ক্রয় না করে ভালো কনফিগারেশনে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্রয় করে থাকেন।
ডেস্কটপ কম্পিউটার সহজে আপগ্রেড করা যায়।
ল্যাপটপ আমাদের জন্য সুবিধাজনক তখনই যখন সেটিকে আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু আপনি যদি আপনার ল্যাপটপটিকে আপগ্রেড করতে চান ঠিক তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। বাজারে অনেক ধরনের ল্যাপটপ রয়েছে যা বিল্ড-ইন করা থাকে এবং সেটি আপনি চাইলেও আপগ্রেড করতে পারবেন না। অন্যদিকে আপনি যদি ডেস্কটপ কম্পিউটার আপগ্রেড করতে চান তবে আপনাকে শুধুমাত্র আপনার পিসি'র কেবল এবং ক্যাসিং খুলে যেকোনো কম্পোনেন্ট চাইলেই আপগ্রেড করতে পারবেন অথবা খুলে নতুন করে অন্য কোন কম্পোনেন্ট লাগাতে পারবেন। ডেস্কটপ এর কম্পোনেন্টগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে আপনি চাইলে যেকোন কম্পনেন্ট খুলে পরবর্তীতে সেই কম্পোনেন্ট টি আপগ্রেড করতে পারবেন। যা আপনি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে পারবেন না।
আপনি যেকোন ল্যাপটপে চাইলেই যেকোনো কম্পোনেন্ট লাগাতে পারবেন না। ল্যাপটপ আপগ্রেড করার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ল্যাপটপের নির্দিষ্ট কিছু পার্টস বা কম্পোনেন্ট বদলানো গেলেও অধিকাংশ কম্পোনেন্ট বদলানো যায় না। যেমন ধরুন ল্যাপটপে আপনি এসএসডি অথবা অতিরিক্ত কোনো হার্ডডিক্স লাগাতে পারবেন না। যদি না আপনার ল্যাপটপে অতিরিক্ত কোন এসএসডি স্লট না থেকে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে আপনি ভালো পারফর্মেন্স এর জন্য চাইলেও একটি এসএসডি আপনার ল্যাপটপে লাগাতে পারছেন না। শুধুমাত্র এসএসডি নয় আপনি চাইলেও আপনার ল্যাপটপে এক্সট্রা কোন গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারবেন না। একটি ল্যাপটপ কে আপগ্রেড করার জন্য বা কোন কম্পনেন্ট আলাদা ভাবে লাগানো অনেক কঠিন এবং ঝামেলার একটি কাজ। একটি ল্যাপটপকে চাইলেই কম্পিউটারের মত খুব সহজে আপগ্রেড করা যায় না। তাই অনেকে রয়েছেন যারা প্রথমে কম দামে একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে সেটিকে ইচ্ছেমতো বিভিন্ন কম্পোনেন্ট প্রয়োজন অনুসারে লাগিয়ে সেটিকে আপগ্রেড করেন। তাই অধিকাংশ লোক ডেস্কটপ কম্পিউটারে বেশি ইন্টারেস্ট থাকেন।
ডেস্কটপ কম্পিউটার সহজেই মেরামত করা যায়।
যেকোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারে যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে আমাদের দ্রুত সেটি মেরামতের প্রয়োজন হয়। আর আমাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ বা কম্পিউটার তার ব্যতিক্রম নয়। যেকোনো সময় আমাদের ব্যবহৃত ডেস্কটপ কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটি ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেলে সেটি আমাদের দ্রুত রিপেয়ার করতে হয়। তখন দেখা যায় একটি ল্যাপটপ এর কোন কম্পনেন্ট নষ্ট হয়ে গেলে সেটি রিপ্লেস করতে হয় সেক্ষেত্রে আমরা চাইলেও নিজে নিজে সেটি চেঞ্জ রিপ্লেস করতে পারিনা। আমাদের কোন টেকনিশিয়ান দ্বারা সেটি করতে হয়। এদিকে ডেস্কটপ কম্পিউটার অনেকটা সুবিধাজনক। কারণ আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর নূন্যতম একটু জ্ঞান থাকলে আপনি চাইলেই আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটার কম্পোনেন্ট গুলো খুলে সহজেই সেটি রিপ্লেস করতে পারবেন। অন্যদিকে ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সেটি অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। তাই একটি কম্পিউটার কেনার পর সেটি নষ্ট হয়ে গেলে সেটিকে মেরামতের কথা বিবেচনা করে অনেকে ল্যাপটপ ক্রয় না করে ডেস্কটপ ক্রয় করে থাকেন।
ডেস্কটপ কম্পিউটারে অনেক বেশি পোর্ট প্রদান করে।
বিভিন্ন কারণে প্রয়োজন অনুসারে আমাদের কম্পিউটারে অনেক ধরনের পোর্ট এর প্রয়োজন হয়। হতে পারে সেটা type-c অথবা ইউএসবি পোর্ট অথবা মাইক্রোফোন অথবা ইয়ারফোন পোর্ট কিংবা প্রজেক্টরের পোর্ট ইত্যাদি। একটি ডেস্কটবে বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্ড রয়েছে সেখানে আপনার যতগুলো পোর্ট সবগুলো পোর্ট পাবেন এখানে। আর যদি এর মধ্য থেকে কোন একটি নির্দিষ্ট পোর্ট আপনার না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি চাইলেই খুব সহজে পোর্ট আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটারে সংযুক্ত করতে পারবেন। অন্যদিকে একটি ল্যাপটপে আপনি এই সুবিধাটি পাবেন না। একটি ল্যাপটপ অনেক ছোট্ট করে একটি স্বল্প জায়গার মধ্যে অনেকগুলো কম্পোনেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকেনা। তাই আপনি যদি কোনো বিকল্প পোর্ট ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে সেটি হয়ে ওঠে না।
ডেস্কটপ কম্পিউটারে বড় স্কিন পাওয়া যায়।
আপনি যেকোন ডেস্কটপ এ চাইলে ইচ্ছামত বড় সাইজের স্কিন ব্যবহার করতে পারবেন। যা আপনি একটি ল্যাপটপ এ পারবেন না। একটি ল্যাপটপে নির্দিষ্ট একটি স্ক্রীন এর সাইজ দিয়ে দেওয়া হয় যা বিল্ডি-ইন থাকে। তাই আলাদাভাবে কোন স্কিন ব্যবহার করা যায় না। আপনি চাইলেও সেটিকে বদলে বড় স্ক্রিন লাগাতে পারবেন না। সেদিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ডেস্কটপ কম্পিউটার কারণ আপনি চাইলেই আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিন বড়,ছোট করতে পারবেন। আপনি চাইলেই যেকোন সময় আপনার ছোট স্ক্রিন এর মনিটর থেকে পরিবর্তন করে বড় সাইজের স্ক্রিনের মনিটর সংযোগ করতে পারবেন। সাধারণত ল্যাপটপের স্ক্রিন 17 ইঞ্চি থেকে শুরু হয় অন্যদিকে আপনি যদি খেয়াল করেন দেখবেন কম্পিউটারের স্ক্রিন 20 ইঞ্চি থেকে শুরু হয়। বলাই বাহুল্য স্ক্রিন এর দিক দিয়ে ডেক্সটপ সব সময় এগিয়ে। তাই অনেকে স্ক্রিন এর চিন্তা ভাবনা করে কম্পিউটার ডেস্কটপ ক্রয় করে থাকেন।
এছাড়াও বেশ কিছু কারণে ল্যাপটপ এর চেয়ে ডেস্কটপ কম্পিউটার ভালো এবং সবাই ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্রয় করে থাকেন যেমনঃ আপনি চাইলেই নিজের জন্য বাছাই করা হার্ডওয়ার দিয়ে আপনি আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটার তৈরি করতে পারছেন,ডেস্কটপ কম্পিউটারে অনেক সময় রেখে দেওয়া যায় এতে কোন প্রকার সমস্যা হয় না, ডেস্কটপ কম্পিউটার তুলনামূলকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকে, ডেস্কটপ কম্পিউটার অনেক বড় হয় সহজে বহন না করতে পারায় এটি চুরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে ইত্যাদি। আজকে এই পর্যন্তই ভালো থাকবেন শুস্থ থাকবেন আবারো ফিরে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে সেই পর্যন্ত sohojtech.com এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ
আরও পড়ুনঃ
0 মন্তব্যসমূহ